সাতক্ষীরার ভাষা ইন্দো ইউরোপীয় মূলভাষা হতে উদ্ভূত মাগধী প্রাকৃত (ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়) মতান্তরে গৌড়ী প্রাকৃত (ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ) হতে বাংলাভাষার আধুনিক রূপ। উপমহাদেশীয় ভাষা বিজ্ঞানীদের মতে সমগ্র বাংলাভাষী অঞ্চল পাঁচটা উপ অথ্চলে বিভক্ত। বৃহত্তর যশোর ও খুলনা জেলাকে উক্ত পঞ্চবিভাজনের মধ্যে বাঙ্গালী উপভাষা অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তুপ্রকৃতপক্ষে বৃহত্তর যশোর, খুলনা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণা (অবিভক্ত) জেলার দক্ষিণাঞ্চল বাঙ্গালী ও রাঢ়ী উপ ভাষার মিশ্রণে এর নবতর ভাষারূপের সমাহার। ভারতেরকোলকাতা রাঢ়ী উপভাষার অন্তর্ভুক্তহওয়ারও মানচলিত ভাষা একই রীতির অন্তর্ভুক্তহওয়ায় এবং সাতক্ষীরা জেলা কোলকাতার সন্নিকটস্থবলেসন্ধি এলাকার অবস্থাানের কারণে এই মিশ্র বৈশিষ্ট্য গড়ে ওঠায় একে "সুন্দরবনী উপভাষা"নামে অভিহিত করা হয়েছে।
(সাতক্ষীরার উপভাষা স্বরূপ ও স্বতন্ত্র; কাজী মুহম্মদ অলিউল্লাহ :১২২, ২০০৯)।
সাতক্ষীরার উপভাষায় রাঢ়ী ও বঙ্গালী রীতির সাধারণ ও মিশ্র বৈশিষ্ট ঃ
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, সাতক্ষীরার উপভাষা মূলত বঙ্গালী উপভাষার অন্তর্ভুক্ত হলেও অবস্থানগত করাণে অবিমিশ্র বঙ্গালী বৈশিষ্টসমূহ সাতক্ষীরার কথা ভাষায় পুরোপুরি রক্ষিত নেই। তাছাড়া নানাবিধ কারণে উপভাষার বৃহত্তর পরিমণ্ডলের ভেতর সর্বত্র একই রীতি নিখুঁতভাবে বজায় থাকেনা। আঞ্চলিক বৈশিষ্টের দিক দিয়ে যশোর জেলার ওপর রাঢ়ী প্রভাব অপেক্ষাকৃত বেশি, খুলনা জেলার ওপর সেক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কম এবং ফরিদপুরের ওপর আরো কম এবং বৃহত্তর খুলনা জেলার অন্তর্ভুক্ত হলেও অবস্থানগত কারণে সাতক্ষীরা জেলার ওপর রাঢ়ী উপভাষার প্রভাব যশোরের থেকেও অপেক্ষাকৃত বেশি, বিশেষত দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে। সাতক্ষীরার উপভাষায় বঙ্গালী ও রাঢ়ী বৈশিষ্ট কতোটা ও কী পরিমাণ বিদ্যমান তার কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট উল্লেখিত হ’লো-
ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট ঃ
১. বঙ্গালী উপভাষার প্রধান বৈশিষ্ট হ’লো ক্রিয়াপদে অপিনিহিত উচ্চারণ বৈশিষ্ট। সাতক্ষীরা রউপভাষায় অপিনিহিতির ই বা উ আগম (বিপর্যাস) আছে ঠিকই, কিন্তুঅক্ষত অবস্থায় নেই। এখানে ই বা উ ধ্বনির আংশিক পরিবর্তন ঘটেছে। আর এই পরিবর্তন রাঢ়ী প্রভাবান্বিত-
যেমন- রাঢ়ীর মানচলিত রীতি- চলছে, চলেছে, চলেছিলো।
বঙ্গালী রীতি- চোইলতে আছে/চোইলতাছে, চোইলাছে, চোইলতেছিলো।
সাতক্ষীরার উপভাষা ঃ চোইলতেচে, চোইলেচে/ চোই লেচ্্ চোই লোলো।
লক্ষনীয় যে, রাঢ়ীর আগম ই ধ্বনি এখানে অর্ধলুপ্ত।
২. বঙ্গালী উপভাষায় উ আগম অপিনিহিতি রূপে পুরোপুরি ব্যবহৃত। যেমন- যাউকগিয়া, মাউরা, কাউল্যা ইত্যাদি।
রাঢ়ী বা মান চলিতে- যাগ্গে মেড়ো, কে’লো ইত্যাদি।
সাতক্ষীরার উপভাষায় শ্বদ মধ্যসি'ত আগম উ দ্ভনির বিলোপ ঘটেছে, তবে সেখানে অর্ধ ই (আগম) ক্ষতিপূরণ রূপে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন- জাই গ্গে / মেই ড়ো, কেই লো ইত্যাদি।
৩. বঙ্গালী উপখাশায় শব্দের আদিতে এ ধ্বনির এ্যা / অ্যা প্রবণতা একটা গুরুত্বপূর্ণ উচ্চারণ রীতি। সাতক্ষীরার উপভাষায় সেটা সর্বত্র ব্যবহৃত হয় না। অনভিজাত, গ্রাম্য অশিক্ষিত বা অল্পশিক্ষিতদের মধ্যে এবং বিশেষ ক’রে সুন্দরবন সন্নিহিত এলাকায় এই রীতি বজায় থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ জাতীয় এ্যা ধ্বনি ব্যবহৃত হয় না। বরং শিক্ষিত, অনভিজাতদের ক্ষেত্রে ঠিক উল্টোটা ঘটে। যেমন-
রাড়ী/মান চলিত- তেল, বেল, বেতন, বেদনা এবং ইত্যাদি।
রঙ্গালী রীতিতে- ত্যাল, ব্যাল, ব্যাতোন, ব্যাদোনা, এ্যাবোং ইত্যাদি।
সাতক্ষীরার উপভাষায় দু’টোই রক্ষিত। তবে মানচলিতের রীতিটা সাধারণত শিক্ষিত, অভিজাত শ্রেণি ও শহরাঞ্চলে প্রযুক্ত হ’য়ে থাকে। পক্ষান্তরে অশিক্ষিত ও গ্রাম্য উচ্চারণে ঠিক তার উল্টোটা ব্যবহৃত হয়। যেম তেল>ত্যাল হয়। ব্যালা>বে-লা ইত্যাদি হয়। অর্থাৎবঙ্গালী প্রভাব পুরোপুরি মুক্ত নয়।
৪. বঙ্গালী অঞ্জল ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, নোয়াখলি প্রভৃতি এলাকায় আদ্য ও দ্বনি উ ধ্বণিতে রূপান্তরিত হয়। কিন্তুএই রীতি সাতক্ষীরার উপভাষা সর্বত্র প্রচলিত নেই। জেলার প্রান্তশ্যামনগর, সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া, তালা ও প্রান্তআশাশুনি (খুলনা জেলা সংলগ্ন) উপজেলাতে এই রীতি প্রচলিত থাকলেও অন্যত্র নেই। যেমন-
রাঢ়ী বা মানচলিত- ওদের, তোদের, তোমরা, হেলো ইত্যাদি।
সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ সংলগ্ন শ্যামনগর, দেবহাটা ও আশাশুনি উপজেলা এবং শিক্ষিতদের মধ্যে এই রীতি প্রচলিত। কিন্তুওপরে উল্লেখিত উপজেলতে উইগের, তুইগের, তুমার, হুইলো ব্যবহৃত হয়। উক্ত চারটে শব্দের প্রথম দুটোতে উ + ই (অর্ধ) অর্থাৎও > উই এবং শেষের দুটোতে ও > উ ব্যবহৃত হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই ধরনের উচ্চারণপ্রবণতা লক্ষ করা গেলেও প্রান্তচব্বিশ পরগণা (প. বাংলা. ভারত)-সংলগ্ন উপজেলাতে রাঢ়ী প্রভাবে মানচলিত রীতিই ব্যবহৃত হ’য়ে থাকে। পূর্ব ও উত্তর পূর্বাঞ্চলে আদ্য উ ধ্বনি ব্যবহারের প্রবণতা লক্ষ করা যায়। উল্লেখ্য যে, প্রথম দুটো শব্দ ওদের ও তোমার রাঢ়ী প্রভাবে যে সব এলাকায়আদ্য ও রক্ষিত সেখানে ওরগা/ওগা, তোরগা/তোগা ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎশুধু আদ্য ও টুকুই রক্ষিত। কিন্তুপরবর্তী ধ্বনি দের (বহুবচন) বঙ্গালী রীতি গের-এর বিপর্যাস ঘটেছে। যেমন-
(দের>) গের>রগে (বিপর্যাস)>রগ্না>(এ>আ)গা(মধ্য’র ধ্বনি লোপ) অর্থাৎতোদের>তোরগা/তোগা।
৫. অ/আদ্য আ-অন-ক ধ্বনিরূপে ফ. ভ মহাপ্রাণ বর্ণের উচ্চারণে বঙ্গালীতে অল্পপ্রাণিভবন ঘটে।
যথা- ভয়>বয়, ঘাট>গাট, কফ>কপ ইত্যাদি।
কিন্তুসাতক্ষীরারা উপভায় রাঢ়ী বা মান চলিত রীতিতেই ব্যবহৃত হয়। তবে খুলনা জেলা সংলগ্ন তালা উপজেলায় অনেকের উচ্চারণে বঙ্গালী রীতির টান লক্ষ করা যায়।
৬. বঙ্গালী উপভাষায় তাড়ন জাতীয় মূর্ধন্য স্বল্পপ্রাণ বা মহাপ্রাণ ধ্বণি ড়. ঢ় এর কোনে উচ্চারণ নেই। সে ক্ষেত্রে শুধু তাড়ন জাতীয় দন্তধ্বনি পার্শ্বিকধ্বনি র’ উচ্চারিত হয়। সাতক্ষীরার উপভাষাতে এ দুটো রাঢ়ী’র মতোই যথাযথভাবে উচ্চারিত হ’য়ে থাকে। শুধু তালা উপজেলার প্রান্তখুলনা জেলাসংলগ্ন এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে বঙ্গালী রীতির মতো র ধ্বনি উচ্চারিত হবার প্রবণতা বিদ্যমান। যেমন- বর (বড়)।
৭. বঙ্গালী উপভাষার প্রধান বৈশিষ্ট অপিনিহিতি, আর রাঢ়ী প্রধান বৈশিষ্ট অভিশ্রুতি ও স্বরসংগতি। যেমন-
ক. অভিশ্রুতি- ক’রে, দে’খে, রক্ষে, ভাগ্য ইত্যাদি।
অথচ বঙ্গালীতে(অপিনিহিতি) ঃ কোইর্যা, দেইখ্যা, রোইক্ষ্যা, ভাইগো ইত্যাদি।
খ. স্বরসংগতি-
সাধুরীতি- দেখিয়াছিল।
বঙ্গালীরীতি- দেইখ্যাছিল।
রাঢ়ী বা মানচলিত রীতি- দেখেছিল (দেখে= স্বরসংগতি)।
সাতক্ষীরার উপভাষা- দে/দিইকোলো। অর্থাৎ-
মাচভা বা রাঢ়ী- দেখেছিল (দ+এ+খ+এ+ছ+ই+ল+ও)
সাউভা-দে/দিইকোলা(দ+এই+ক(অল্পপ্রাণিভবন)+ও+(ছ+ই(লাপ)ল+ও)।
সাধুরীতি- মরিয়াছি
রাঢ়ী বা মানচলিত রীতি- মেরেছি (মেরে-স্বরসংগতি)
বঙ্গালী রীতি-মাইরাছি
সাতক্ষীরার উপভাষা- মারিচি (রিচি = স্বরসংগতি)।
৮. আদ্যক্ষর বা আদ্যধ্বনিতে শ্বাসাঘাত পড়া এবং পড়ার কারণে পরবর্তী শব্দ মধ্যে বা অনে- অল্পপ্রাণিভবন ঘটা রাঢ়ী রীতির একটা উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট যেটা বঙ্গালীতে বিরণ ক্ষেত্র ছাড়া দেখা যায় না।
এই বৈশিষ্টটা সাতক্ষীরার উপভাষায় ব্যাপকভাবে লক্ষিত। যেমন-
মধু>মোদু, কাঁঠাল>কাঁটাল, সুখ>শুক ইত্যাদি।
বঙ্গালীতে মধ্য ও অন- ধ্বনিতে সাধারণত মহাপ্রাণধ্বনি ব্যবহৃত হ’য়ে থাকে।
৯. রাঢ়ী উপভাষায় কখনো কখনো সন্ধিজনিত কারণে, কখনো কারণ ছাড়াই অঘোষ ধ্বনি ঘোষবৎউচ্চারিত হয়। যেমন-সন্ধিঘটিত- বটগাছ>বড্গাজ, পাঁচ ভরি> পাঁজ ভোরি ইত্যাদি।
এখানে পরবর্তী ঘোষধ্বনির প্রভাবে পূর্ববর্তী অঘোষে সমিভবন ঘটেছে। অর্থাৎ= ট+গ>ড+গ, চ+ভ>জ+ভ>জ+ব হয়েছে।
কারণ ছাড়া (বিষমিভবনে) ঃ কাক>কাগ, শাক>শাগ, ফুপু>ফুবু ইত্যাদি।
উল্লেখ্য যে, সাতক্ষীরার উপভাষায় এই ঘোষধ্বনির অঘোষ উচ্চারণ একটা স্বাভাবিক বৈশিষ্ট। মূলত গ্রাম উচ্চারণে এই বৈশিষ্ট ব্যাপকভাবে লক্ষ করা যায়। যেমন ঃ
খবর>খপোর, গরিব>গোরিপ, আসবে>আশপে, বাবা>বাপা, শাবা>শাপা, বাবু>বাপু, শাবল>শাপোল ইত্যাদি।
১০. রাঢ়ী উপভাষায় অ পরবর্তী ই বা উ ধ্বনি থাকলে আদ্য অ ধ্বনি এর উচ্চারণ ও হয়ে যায়, কিন' উপসর্গ অ এর উচ্চারণ অবিকৃত থাকে।
যেমন ঃ অতি>ওতি (অ পরবর্তী ই থাকায় ও তে রূপানি-রিত)।
অবিচার>অবিচার (রাঢ়ীতে আদ্য অ উপসর্গ হওয়ায় অ ধ্বনি অবিকৃত)।
কিন্তুবঙ্গালীতে ওবিছার, ওশুখ, ওনীল হয়ে যায়। অর্থাৎআদ্য অ উপসর্গের ক্ষেত্রে অ ধ্বনি অবিকৃত থাকে না। সাতক্ষীরার উপভাষায় এক্ষেত্রে রাঢ়ী রীতিটাই ব্যবহৃত হ’য়ে অবিচার, অশুক, অনিল হয়।
১১. বঙ্গালী উপভাষায় পদমধ্যসি'ত শ, স প্রবৃতি উষ্ম শিষ্ দ্বনি হ তে রূপান্তরিত হয়। কখনো কখনো ছ অর্থাৎঅঘোষ মহাপ্রাণ তালব্য ধ্বনিতে পরিণত হয়। যথা-
বস>বহো. সে>হে. আসে>আহে, সকল>হগোল ইত্যাদি (ইম্ম শিস ধ্বনি)।
সময়>ছোমায়, বিশাল>বিছাল, বাস>বাছ, শ্বাসাঘাত>ছাছাগাত ইত্যাদি (অঘোষ মহাপ্রাণ তালব্য ধ্বনি)।
সাতক্ষীরার উপভাষাতে খুলনা জেলা সংলগ্ন তালা বাদে অন্যান্য উপজেলার প্রায় সর্বত্রই শ,স এর সঠিক উচ্চারণ প্রচলিত, যা রাঢ়ী বৈশিষ্টের ফল। তবে শিশু, নারী এবং বিশেষত হিন্দু নারীদের উচ্চারণে ২নংবৈশিষ্ট অর্থাৎছ/চ ধ্বনি ব্যবহৃতহবার প্রবণতা লক্ষ করা যায়।
১২. শব্দমধ্যসি'ত ক ধ্বনি বঙ্গালী উপভাষায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে অ ধ্বনিতে রূপান্তরিত হয়। যথা-
সকল>শোআল, টাকা>টাআ/টেকা ইত্যাদি।
কালিগঞ্জ, শ্যামনগর, দেবহাটা, সাতক্ষীরা সদর ও আশাশুনির প্রায় সর্বত্র এবং যশোর ও খুলনা জেলা সংলগ্ন তালা ও আশাশুনির কিছু এলাকা ছাড়া সর্বত্র শব্দমধ্যসি'ত ক ধ্বনি স্বাভাবিকভাবে উচ্চারিত হয়।
১৩. যশোরসংলগ্ন তালা উপজেলা এবং খুলনাসংলগ্ন আশাশুনি উপজেলার কিছু অংশ বাদে সাতক্ষীরা জেলার সর্বত্রই অসংখ্য শব্দে রাঢ়ী বৈশিষ্টের প্রভাবে স্বতোনাসিক্যভবন ঘটে। যেমন-
কাচ>কাঁচ, হাটু>হেঁইটো, ঝাটা>ঝ্যাঁটা, শাকো>শাঁকো, শোডা>শোঁটা ইত্যাদি।
১৪. রাঢ়ীতে উত্তর পুরুষের অতীতকালের ক্রিয়াপদে লুম, লেম, নু ইত্যাদিব্যবহৃত হয়্।সাউভাতে সেক্ষেত্রে শুধু লাম এবং দক্ষিণ চব্বিশপরগণারকিছু অভিবাসীদের উচ্চারণে নু ব্যবহুত হয়্ যেমন- জাবানু, হবানু, খাবানু ইত্যাদি। সাউভাতে ভবিষ্যৎকালে অবশ্য এ্যনে/আ্যান্ ব্যবহৃত হয়। যেমন- হব্যানে/ন্, দ্যাকপানে ইত্যাদি।
১৫. রাঢ়ীতে প্রথম পুরুষের অকর্মক ও সকর্মক উভয় ক্রিয়ার অনে- ল, লে যুক্ত হয়। সাউভাতে অভিজাতদের মধ্যে লে এবং অনভিজাত শ্রেণীর মধ্যে এ্যালে ও ল্যা ব্যবহৃত হয়। যেমন- লেবো, লেইশো, লেচো (অভি) ইত্যাদি।
১৬. কোনো কোনো ক্ষেত্রে বঙ্গালী উপভাষায় কিছু কিছু শব্দে অস্থানে স্বতোনাসিক্যভবন ঘটে। যথা- টাকা>টেআঁ, আমি>আঁই (এখানে ম এর বিকল্পে চন্দ্রবিন্দু (আনুনাসিক) ব্যবহৃত হয়েছে), বই>বোঁই ইত্যাদি।
সাতক্ষীরার কোন অঞ্চলে এ জাতীয় উচ্চারণ লক্ষ করা যায়না।
১৭. সাতক্ষীরার উপভাষার শব্দের আদিতে বা মধ্যে হ শিস ধ্বনির যথাযথ প্রয়োগ একটা স্বাভাবিক বৈশিষ্টের অন্তর্ভুক্ত, যা বঙ্গালী উপভাষার রীতি বিরুদ্ধ। সাতক্ষীরার এই বৈশিষ্ট রাঢ়ী প্রভাবের সংঘটিত। কিন্তুকালিগঞ্জ, শ্যামনগর ও শ্যামনগর সংলগ্ন আশাশুনি উপজেলায় এবং বিশেষত অনভিজাত ও অল্পশিক্ষিতদের ভেতর শব্দের আদিতে অ ধ্বনির উচ্চারণে হ ধ্বনি প্রবণতাও একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্যের অন্তর্ভুক্ত। যেমন-
এত>হ্যাতো, এখন> হ্যাকোন, অমন> হমোন, অত>হতো, এ্যাতো>হ্যাতো>হেইত্তে, এমনি>হেমনি, একুশ> হেকুশ, এ>হে ইত্যাদি।
১৮. স্বতোনাসিক্যভবন রাঢ়ীর একটা উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট। এর বৈশিষ্ট সাউভার দক্ষিণ পশ্চিম এলাকাকে প্রভাবিত করছে। উত্তর ও উত্তর পূর্বএলাকায় এই বৈশিষ্ট কোনো প্রভাবিত করতে পারেনি।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS